![]() |
E-commerce Business BD |
ই-কমার্স (E-Commerce)-এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ইলেকট্রনিক কমার্স (Electronic Commerce)। এটা হলাে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাহায্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ইলেকট্রনিক অন লাইনের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে লেনদেন ও পণ্যের আদান-প্রদান করা হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাণিজ্য করতে পারেন। অনলাইনের এ বাণিজ্যকে E-commerce বলে। Electronic Commerce-এর সংক্ষিপ্ত রূপই ই-কমার্স উৎপাদনকারী বা বিক্রেতা পণ্যের বিবরণ বিজ্ঞাপন আকারে তাদের ওয়েব পেজে প্রদর্শন করেন।
ক্রেতা কোনাে পণ্য সম্পর্কে আগ্রহী হলে ওয়েব পেজের অর্ডার ফরম পূরণ করে বিক্রেতার নিকট অর্ডার প্রদান করেন এবং একই পদ্ধতিতে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশােধ করেন। বিক্রেতা। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ক্রেতার নিকট পণ্য পৌছে দেন। ইন্টারনেটভিত্তিক এরূপ ক্রয় পদ্ধতিকে অনলাইন শপিং বলা হয় এবং সামগ্রিক এ ব্যবসায় ব্যবস্থাপনাই ই-কমার্স।
আমাজন ও দারাজ কি ই-কমার্স বিজনেস?
আমাজন
![]() |
Amazon.com |
আমাজন হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ ই - কমার্স প্রতিষ্ঠান। অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় - বিক্রয়ে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। amazon.com এর সদর দপ্তর ওয়াশিংটনের সিয়াটলে অবস্থিত। এটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
দারাজ
![]() |
daraz.com.bd |
দারাজ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।
২০১২ সালে পাকিস্তানে দারাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। রকেট ইন্টারনেটের উদ্যোগে মুনীব ময়ূর (প্রতিষ্ঠাতা) এবং ফারেস শাহ্ (সহ-প্রতিষ্ঠাতা) দারাজকে অনলাইন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
বর্তমানে এটি বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং নেপালে তাদের পরিষেবা প্রদান করে।
বুজার্কি মিক্কিলেসেন দারাজের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। রকেট ইন্টারনেট ২০১৮ সালে চীনের আলিবাবা গ্রুপের কাছে ই-কমার্স কোম্পানি দারাজ গ্রুপকে বিক্রি করে দেয়।
ই-কমার্স (E-Commerce) প্রকারভেদ :
ই-কমার্স সাধারণত তিন প্রকার।
১. বিজনেস টু কনজিউমার (B2C) ই-কমার্স
২. বিজনেস টু বিজনেস (B2B) ই-কমার্স
৩. কনজিউমার টু কনজিউমার (C2C) ই-কমার্স
ই-কমার্সের মাধ্যমে যে কোনাে দেশে বসে অন্য এক দেশের পণ্য বা সেবা কেনা-বেচা করা সম্ভব। EDI-Electronic Data Interchange হওয়ায় টাকা হারানাের ভয় থাকে না। সপ্তাহে সাত দিন এবং প্রতিদিনের ২৪ ঘণ্টাই কেনা-বেচা করা সম্ভব। ই-কমার্সের ফলে কেনা-বেচার সময় কম লাগে এবং পণ্য বা সেবা দ্রুত কাস্টমার/ভােক্তা/ক্রেতার দোরগােয়ায় পৌছে যায়। ই- কমার্সের ফলে ভার্চুয়াল অরগানাইজেশন/ডিজিটাল ফার্ম গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ ফিজিক্যাল লােকেশন ছাড়াও অর্গানাইজেশন তাদের ব্যবসা করতে পারছে। ই-কমার্স বিশ্ব বাণিজ্যে যেমন বিপ্লব এনেছে তেমনি এনে দিয়েছে নিরাপত্তা ও দ্রুততা।
ই-টেকনােলজির বড় একটি বৈশিষ্ট্য হলাে পেমেন্ট সিস্টেম। এই পেমেন্ট সিস্টেম ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড, ইলেকট্রনিক চেক, ফোন বা আইভিপি (IVP) গ্রহণ করে যা সাধারণ পে-সিস্টেমের চেয়ে অনেক বৈচিত্রময় , সুবিধাজনক এবং নিরাপদ। বাংলাদেশ ই-কমার্সের বর্তমান অবস্থা ও ই-কমার্স প্রসারে সরকারের ভূমিকা: বাংলাদেশে বাণিজ্য ঢুকছে আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করে। এখন বই, সিডি প্রভৃতি ছােটখাটো জিনিস বিক্রয় হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এরপর সবচেয়ে বড় জোয়ার আসবে মাঝারি মাপের সংস্থাগুলাের ক্ষেত্রে।
ই-কমার্স যে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছে, সেখানে চাকরি জোটাতে প্রচুর আগ্রহ', উৎসাহ ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু নিজের ব্যবসাকে ‘নেটবন্দি করার দৌড়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বেশ পিছিয়ে। ই-কমার্সকে নিজের ব্যবসায় কাজে লাগানাের জন্য সবচেয়ে বেশি তৎপরতা এখন শুধু ঢাকাতে।
ই-কমার্স প্রসারে সরকারের ভূমিকা:
এ দেশে ই-কমার্সের প্রসার কত দ্রুত হতে পারে তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে বিভিন্ন মহলে। অনেকের মতেই ই-কমার্সের প্রচলন যে শুধু অনিবার্য তাই নয়, আগামী দশকের মধ্যেই এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়ে যাবে এ দেশে। কেউ কেউ অবশ্য প্রসারের মাত্রা নিয়ে কিছুটা সন্দিহান। তবে সবাই যে ব্যাপারে একমত তা হলাে, গতানুগতিক ব্যবসা ও লেনদেনের পদ্ধতিকে পিছনে ফেলে দিয়ে ই-কমার্সকে যদি সত্যিই জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে ওঠতে হয় তাহলে সরকারকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
শুধু দেশেই নয় , ই-কমার্সের মাধ্যমে যেহেতু বাণিজ্য চলবে বিশ্বজুড়ে, তাই নতুন আইনের প্রয়ােজন বিশ্বজুড়েই। আর এর জন্য সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক স্তরে বিশেষজ্ঞদের আলােচনা সভার আয়ােজন করা । ইন্টারনেট বিশ্ববাজারকে এক মঞ্চে নিয়ে এসেছে। সে কারণেই এ নতুন আইন বিশ্বজুড়ে অবাধ বাণিজ্যের পরিবেশের সাথে সঙ্গতি রেখেই তৈরি করা উচিত।
আমাদের দেশের প্রধান দুর্বলতা, এখানে ইন্টারনেটের ব্যবহার এখনও এতটা প্রচলিত নয়। কিন্তু আশার কথা, ই-কমার্সের ব্যবহার ও প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে শিল্পমহলকে অবহিত করতে বিভিন্ন সংগঠনগুলাে দেশ জুড়ে আলােচনার আয়ােজন করেছে। বাংলাদেশেও ই-কমার্সের সুযােগ ব্যাপক। কারণ বিশ্বায়নের এ যুগে কোনাে একটি দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব তাে আর সে দেশে আটকে থাকে না। আমেরিকার কিছু পাল্টালে তার ধাক্কা কিন্তু বাংলাদেশের গায়ে এসেও লাগবে ।
E-Commmerce এর ব্যবহার ও প্রয়ােগ :
√ ই-কমার্স দ্রুতগতিতে আর্থিক লেনদেন সুযােগ সৃষ্টি করেছে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতি এ ধরনের লেনদেনের জন্য বহুল পরিচিত। এ পদ্ধতির মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে বিশ্বের যে কোনাে স্থানের একটি ব্যাংক দূরবর্তী যে কোনাে ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে সক্ষম। ফলে অবস্থানগত দূরত্ব বেশি বা কম হলেও আর্থিক লেনদেন একই সময়ে এবং দ্রুতগতিতে করা সম্ভব হচ্ছে।
√ ই-কমার্স ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহের দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। ব্যবসয়িক সমঝােতা ও বদ্ধন তৈরির জন্য ই-কমার্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহের পরস্পরের মধ্যে লেনদেন, চুক্তি এবং পরস্পরের ব্যবসা সম্পর্কে জানার জন্যে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বা এক স্থান থেকে অন্যস্থানে মানুষকে যেতে হচ্ছে না।
ই-কমার্স সুবিধা ব্যাবসায়ীকে দূরবর্তী আরেকজন ব্যবসায়ীর সাথে ব্যবসায়িক কাজ করার সুযােগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।
√ ই-কমার্স আজকের দিনে একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল হাতিয়ার। বিশেষত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অফিস এবং শাখা অফিসের মধ্যে দ্রুত যােগাযােগ ব্যবস্থা, ব্যবসা পর্যবেক্ষণ, পরিচালনা এবং সিদ্ধান্তে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
ই-কমার্স কাস্টমারকে উন্নত সার্ভিস প্রদানের সুবিধা দেয়। কম সময়ে কাস্টমার সার্ভিস প্রদান এবং সঠিক তথ্য প্রদান ই-কমার্সের বেশিষ্ট্য।
√ ই-কমার্স ব্যবসা-বাণিজ্যের বিজ্ঞাপন এবং বিপণনের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। যে কোনাে পণ্য বা সেবা বিশ্বব্যাপী বিপণন করার জন্য কোম্পানিগুলাে নিজস্ব ওয়েবসাইট অথবা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসায়ের উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে।
Cyber Criminal গণ নানাভাবে E-commerce এর অসাধু সুবিধা নিচ্ছে। বর্তমানে পাসওয়ার্ড চুরি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাঙ্গা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। সাধারণত Cyber Criminal গণ নেটওয়ার্কে আড়ি পাতে এবং গােপন তথ্য জেনে নেয় এবং ফলস্বরূপ কোনাে ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
0 Reviews
Your rating