![]() |
পুলিশ কর্তৃক অবৈধ গ্রেফতার |
পুলিশ কর্তৃক বেআইনি গ্রেফতার
পুলিশ সন্দেহবশতঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় যদি বিনা দোষে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হয়- মনে রাখুন, ২৪ ঘন্টার বেশি আপনাকে আটক করে রাখার উপায় নেই। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে দ্রুত কোন আত্মীয়কে থানায় আসতে বলুন। অনেক সময় দেখা যায় বখাটেদের সাথে সাথে ঘটনাস্থলের নিরীহ ছেলেও ধরা পড়ে। এক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় যদি থানায় এসে লিখিত দিতে পারে যে, ধৃত ব্যক্তি তাঁর সাথে সম্পর্কিত এবং সে যা পরিচয় দিচ্ছে সেটি সঠিক- এক্ষেত্রে আপনি ছাড়া পেয়ে যাবেন।
আসামী ধরে আনার কাজটা মূলতঃ করে কনষ্টেবল থেকে এস.আই পর্যায়ের অফিসারেরা। একটি থানায় তাদের নেতা হচ্ছেন ওসি। আপনি যদি ওসির সাথে (ওসি না থাকলে ইন্সপেক্টর-তদন্ত সাহেব) সরাসরি দেখা করে বা যোগাযোগ করে আপনার আত্মীয়ের নির্দোষিতা প্রমাণ করতে পারেন সেক্ষেত্রেও বিপদ কেটে যাবার কথা।
পুলিশ আপনাকে বেআইনি ভাবে গ্রেফতার করলে কি করবেন?
ধরে নিন, যেকোন ভাবেই আপনি বিনা অপরাধে খারাপ পুলিশের খপ্পরে পরেছেন। তাহলে নিচের পদক্ষেপ অনুসরণ করুন, অনেক কাজে দেবে। মনে রাখবেন, চাকুরীর ভয় সবার আছে এবং পুলিশের সেটা আরো বেশি আছে। যতই ঘুষ খাক না কেন ধরা পড়লে রক্ষা নেই। তাই, ঘুষ বিরোধী লোকদের জন্য পুলিশের বেআইনি গ্রেফতারের বিরুদ্ধে করনীয় :
১. ইউনিফর্ম পড়া পুলিশ হলে প্রথমেই বুকে থাকা নামটি দেখে নিন। (সিভিল হলে তার নাম, র্যাং ক, থানা বা কোন ইউনিট ইত্যাদি জেনে নিন)।
২. পুলিশের কয়েক জন সৎ বড় কর্তার নাম (ঐ এলাকার এসি, এডিসি ক্রাইম, ডিসি/এএসপি সার্কেল, এ্যাডিশনাল এসপি, এসপি) মুখস্থ করে রাখুন, তবে আইজিপি হলে হবে না। কেননা, সবাই জানে তার নাম। পুলিশে ধরলেই জানিয়ে দিন ঐ পুলিশকে যে "আমাকে বিনা কারণে কিছু করলে আমি ঐ অফিসারের কাছে আপনার/আপনাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করব।" মৌখিকের চেয়ে লিখিত অভিযোগে কাজ হয় ভাল। মৌখিক কথার এ্যাকশন হলো কিনা আপনি জানতে পারবেন না তবে ইন্সট্যান্ট কাজ হতে পারে।
৩. একান্তই কখনও কোন পুলিশের পাল্লায় পড়ে টাকা খোয়ালে সংশ্লিষ্ট এলাকার ডিসি (জেলা শহর হলে এসপি) বরাবর অভিযোগ দাখিল করুন। আইজিপি এবং কমিশনার অফিসেও প্রেরণ করতে পারেন। একটা অভিযোগ পত্র লিখে তার ফটোকপি পাঠান এসব জায়গায়।
৪. আপনি মেট্টোপলিটনের আওতাভুক্ত হলে সকল ডিসির নাম্বার সংরক্ষণ করুণ। মেট্টোপলিটনের বাইরে হলে এসপির নাম্বার সংরক্ষণ করুণ। নাম্বারের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ ফোনবুক এ্যাপসটি অবশ্যই আপনার ফোনে ডাইনলোড করে নিবেন। প্রয়োজনে এসপি বা ডিসিকে সরাসরি ফোন করুণ। এ্যাপটি ডাউনলোড করতে গুগল প্লে ষ্টোরে গিয়ে bdpolice লিখে সার্চ দিন।
৫. আপনি যদি অপরাধ না করেন, পুলিশ কর্তৃক যে কোন প্রকার নির্যাতনের স্বীকার হলে সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের জানান।
৬. অপরাধ প্রবণ পুলিশদের মনোবল সব সময় কম থাকে, তাই আপনি যদি তাদের ঠিক ভাবে ম্যানেজ করতে পারেন, তারা আপনার সাথে কঠোর হওয়ার সাহস পাবে না।
৭. আপনি নিজে যদি অপরাধী না হন, কোন ভাবেই পুলিশের জেরাতে ভয় পাবেন না। যা সত্যি তাই খোলা-মেলা ভাবে বলুন। কখনও মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না। স্মার্টলি হ্যান্ডেল করুন।
আরো পড়ুনঃ পুলিশ থানায় মামলা না নিলে কি করবেন?
৮. সবচেয়ে বড় কথা আইনের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল থাকুন এবং নিজের উপর আস্থা রাখুন। পুলিশ দেখে কখনও ভয় পাবেন না। কেননা, পুলিশ রয়েছে আপনাকে রক্ষা করতে, আপনার ক্ষতি করতে নয়।
৯. পুলিশ ফোনে টাকা চাইলে সাথে সাথে রেকর্ড করতে করতে তার সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে থাকুন। কতটাকা, কিভাবে দিতে হবে, কখন নেবেন, আপনার নাম কি, কোন থানা বা ফাঁড়ি, মামলা বা অভিযোগ কার বিরুদ্ধে, কে করেছে ইত্যাদি কথার মধ্যে সংযুক্ত রাখুন। ব্যাস, এটা অভিযোগের সাথে জমা দিন ঐ এলাকার এসি, এডিসি ক্রাইম, ডিসি, কমিশনার অথবা এএসপি সার্কেল, এ্যাডিশনাল এসপি, এসপি বরাবর।
১০. জায়গা-জমি সংক্রান্ত কোন কিছুই পুলিশের করার কোন আইনগত অধিকার নেই (শুধু কোর্টের আদেশ পালন করতে পারবে)। তবে যদি কোন জায়গা নিয়ে শান্তি ভঙ্গের আশংখা দেখা দেয় তাহলে তারা একটি হুশিয়ারি নোটিশ জারি করতে পারে, থানায় আপনার জমির কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হতে বলতে পারে (তার সাধ্য নেই কোন রায় দেয়ার…. কাগজ দেখেই শোধ…. বোগাজ। জায়গা জমি সম্পুর্ন দেওয়ানী আদালতের বিষয় নট পুলিশের। পুলিশ শুধু ফৌজদারী বিষয় নিয়ে কাজ করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত)। সুতরাং আপনার জায়গা নিয়ে কিছু করতে গেলে স্মার্টলি তার সাথে তার একতিয়ার নিয়ে কথা বলুন। কোর্টের কাগজ আছে কিনা জানতে চান।
স্পেশাল স্টেপ :
পুলিশ আপনার সাথে অবৈধ কিছু করলে জেলায় এসপি আর মেট্রোতে ঔ এলাকার ডিসিকে ফোন করার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করুন (ফোন করতেও পারেন ইন্সট্যান্ট ঘটনার সময় ), লিখিত অভিযোগের এক কপি কমিশনারের কাছে পাঠান। একটা অভিযোগ সিকিউরিটি সেল, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, ফুলবাড়িয়া, ঢাকা বরাবর ঔ অফিসারের বিরুদ্ধে পাঠান। (থানায় বলে লাভ হ্ওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম)। জিডি করতে গেলে “ভাই খরচ পাতি দেন”। এক টাকাও দেবেন না। পারলে ফোনের রেকর্ডার চালু করে কথা বলুন, খরচ পাতির কথা বললে তাকে শুনিয়ে দিন যে তার কথা আপনার কাছে রেকর্ড করা হয়েছে এবং আপনি উপরে উল্লেখিত ব্যাক্তিদের কাছে অভিযোগ করবেন।
জিডি/ অভিযোগ / মামলা কোনটা করতেই কোন টাকা লাগেনা। আসল কথা হলো পুলিশের সাথে জনগনের আইনের কোথাও কোন টাকার লেনদেনের কথা নেই। পুলিশের সাথে টাকা লেনদেনটাই অবৈধ। একটি পয়সাও দিবেন না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : আইন জানুন এবং সব সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন।
আজকের আর্টিকেলটি (পুলিশ কাউকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করলে কি করবেন?) পছন্দ হলে শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দেয়ার অনুরোধ রইলো। আর যদি আপনাদের মনে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে তা নিচে কমেন্ট করেও জানাতে পারেন।
যে কোন আইনী পরামর্শের জন্যে যোগাযোগ করতে ইমেইল করুন -
Email: sylhetindependent@gmail.com
অথবা,
কন্টাক্ট বক্সে মেসেজ করতে পারেন।