![]() |
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পপ সম্রাট আজম খান |
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পপসম্রাট আজম খানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি :
আজম খান একজন বাংলাদেশি বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পেশায় একজন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা ও বিজ্ঞাপনের মডেল ছিলেন।
আজম খানের বাবা আফতাব উদ্দিন খান সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। বাবার অনুপ্রেরণায় যুদ্ধে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পায়ে হেঁটে আগরতলা চলে যান। আগরতলার পথে সঙ্গী হন তাঁর দুই বন্ধু।
তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ভারতের মেলাঘরের শিবিরে। সেখানে তিনি শহিদ জননী জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠ পুত্র শাফী ইমাম রুমীর কাছে এলএমজি রাইফেল চালানো সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ সময়ে তাঁর লক্ষ্য ছিলো ২ নং সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করা।
আজম খান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন মাত্র ২১ বছর বয়সে। তাঁর গাওয়া গান প্রশিক্ষণ শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যোগাতো। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেয়া শুরু করেন। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি পুনরায় আগরতলায় ফিরে আসেন। এরপর তাঁকে পাঠানো হয় ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইন-চার্জ। আর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন খালেদ মোশাররফ। ঢাকায় তিনি সেকশান কমান্ডার হিসেবে ঢাকা ও এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন।
আজম খান মূলত যাত্রাবাড়ি-গুলশান এলাকার গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পান । এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত "অপারেশন তিতাস"। তাদের দায়িত্ব ছিল ঢাকার কিছু গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করার মাধ্যমে বিশেষ করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, হোটেল পূর্বাণীর গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটানো। তাঁদের লক্ষ্য, ঐ সকল হোটেলে অবস্থানরত বিদেশিরা যাতে বুঝতে পারে যে দেশে একটা যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে তিনি তাঁর বাম কানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। যা পরবর্তীকালে তাঁর শ্রবণক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটায়।
আজম খান তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে পুরোপুরি ঢাকায় প্রবেশ করেন ১৯৭১-এর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। এর আগে তারা মাদারটেকের কাছে ত্রিমোহনীতে সংগঠিত যুদ্ধে পাক সেনাদের পরাজিত করেন।
দেশ স্বাধীনের পর তিনি অস্ত্র ফেলে হাতে তুলে নিয়েছিলেন গিটার। তাঁকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সঙ্গীতের একজন অগ্রপথিক বা গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর গানের বিশেষত্ব ছিলো পশ্চিমা ধাঁচের পপগানে দেশজ বিষয়ের সংযোজন ও পরিবেশনার স্বতন্ত্ররীতি ।
আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ (রেল লাইনের ঐ বস্তিতে), ওরে সালেকা ওরে মালেকা, আলাল ও দুলাল, পাপড়ি কেন বোঝেনা, অনামিকা ইত্যাদি।
সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও তাঁকে সঙ্গীত ভক্তরা পাপ সম্রাট হিসেবে আখ্যায়িত করে।
আজম খান ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫০ সালে ঢাকার আজিমপুরে জন্ম গ্রহন করেন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৫ জুন, ২০১১ সালে (ঢাকা) ।
আজকের আর্টিকেলটি পছন্দ হলে শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দেয়ার অনুরোধ রইলো। আর যদি আপনাদের মনে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে তা নিচে কমেন্ট করেও জানাতে পারেন।